সন্তান প্রাপ্তির জন্য/ For Pregnancy

প্রকৃতি মানুষের উৎপত্তির যে জটিল ব্যবস্থা করেছেন তার সামনে বিজ্ঞান সর্বদা নতমস্তক হয়েছে৷ নারী-পুরুষ রূপে তিনি স্পষ্ট বিভাজন করে দিয়েছেন৷ নারী-পুরুষের মিলনেই সন্তান অথবা মনুষ্য জন্ম হয়৷ তবে প্রাচীনকালে যে ব্যবস্থাই থাকুক না কেন, বর্তমানে আমাদের সামনে বিবাহরূপী ধার্মিক ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷ বিয়ে করে নারী-পুরুষ সর্বপ্রথম স্বামী-স্ত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়৷ স্বামী-স্ত্রী হয়ে তারা সন্তানের জন্ম দেয়৷ মানুষের মানসিক ও শারীরিক পিপাসা মেটাবার সাথে-সাথে সন্তান জন্মের ক্রিয়াও শুরু হয়৷

  • পৃথিবীতে এরকম কোনও স্বামী-স্ত্রী পাওয়া যাবে না যারা সন্তানের  কামনা করে না৷ বিয়ের পরে প্রথমে না করলেও পরে একটা সময়ে কামনা করে থাকে৷ আজকের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সন্তান একটি অথবা দুটি নেওয়া উচিত৷ সে একটিও হলে সন্তানের কামনা তারা অবশ্যই করে৷

সন্তানের সাথে মানুষের অহঙ্কার জুড়ে থাকে৷ যদি কোনো পুরুষ, স্ত্রীর সাথে থাকার পরেও সন্তান না হয় তাহলে লোকেরা তাকে ‘হিজরা’, ‘নপুংসক’ও আরো অনেক কিছু বলে থাকে৷ এটি পুরুষ মানুষের কাছে অপমানজনক উক্তি৷ বাঁজা স্ত্রীলোকের ছায়াকেও মানুষ অশুভ মনে করেন৷

এইভাবে সন্তানের জন্ম বিবাহিত স্ত্রী-পুরুষদের মধ্যে বয়সের প্রেমবলে মনে করা হয়৷ সাধারণত সন্তান না হলে পুরুষের দোষ দেখা হয় না, এর জন্য স্ত্রীকেই সবসময় দোষী সাব্যস্ত করা হয় ও পুরুষের পরিবারের লোকেরা তাকে বার বার অভিশাপ দিতে থাকে৷

সন্তান দুই ধরনের হয়—ছেলে অথবা মেয়ে৷ পুরুষ প্রধান সমাজ ব্যবস্থা হবার কারণে ছেলে হওয়া  শুভ ও মেয়ে হওয়া অশুভ মানা হয়৷ একথা সত্য যে আস্তে-আস্তে এই মতভেদ আর থাকছে না ও এর ফলে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আর পার্থক্য থাকছে না৷

বিজ্ঞান অনুযায়ী প্রকৃতি সন্তানের জটিল প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন৷ অন্য জীব-জন্তু বা পশুর পাশাপাশি মানুষ শুধুমাত্র একবার মিলনেই গর্ভধারণ করতে পারে এমন কোনও সুনিশ্চিত ব্যবস্থা নেই৷

মানুষকে অনেক বার মিলন করতে হয়৷ কখনো কখনো ঠিকঠাক মিলন হবার পরেও ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর পারস্পরিক সংঘাত না হবার ফলে গর্ভধারণ হয় না, এতে মাসের পর মাস লেগে যায়৷ কারোর আবার সঙ্গে সঙ্গে সংঘাত হয়ে যায়৷ এসবই প্রকৃতির খেলা৷

গর্ভধারণ হবার পরে কখনো কখনো গর্ভপাত হয়ে যায়৷ মানুষের কাছে এটা আশ্চর্যের বিষয় যে তারা অনেক বার মিলিত হয়েছে ও অনেক বার গর্ভপাতের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ আপনি কি এটা শুনেছেন যে অন্য কোনও  জীব-জন্তু বা পশু-পাখির কোনও গর্ভপাত হয়েছে বা একবার মিলন করার পরে গর্ভসঞ্চার হয়নি৷

মানুষের বিষয়ে গর্ভধারণ হয়ে যাবার পর এটা বোঝা মুশকিল যে সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে? কিন্তু এখন এই বিষয়ে বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে৷ গর্ভধারণের প্রায় চার মাস পর এটা বোঝা যায় যে শিশু ছেলে না মেয়ে৷ এই সব জটিলতার জন্য সন্তানের জন্ম দেওয়া মানুষের কাছে একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ মানুষ নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সন্তান জন্ম দিতে পারে না৷ এটা একটা বড় বিড়ম্বনা৷

এছাড়া পৌরাণিক কাহিনীতে অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়৷ যখন মুনি দ্বারা ব্যক্তিদের ইচ্ছা অনুযায়ী সন্তান দেওয়া হত৷ তাদের দেওয়া ফল খেয়ে স্ত্রীরা গর্ভবতী হতেন এবং তাদের পুত্রসন্তান হত৷ আসলে এই রহস্যটি কী? মানুষ কি তাদের ইচ্ছামতো সন্তানের জন্ম দিতে পারে?

বিজ্ঞানের পরিভাষায় গুণ সমান হলে মেয়ে ও বিষম হলে পুত্রের প্রাপ্তি হয় আর যদি কোনও ব্যবস্থা অথবা ক্রিয়ার সাহায্যে এই ধরনের কার্য সম্পন্ন করা হয় তাহলে অবশ্যই ফল ইচ্ছানুসারে পাওয়া যাবে৷ হয়ত প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিদের ফলে এই গুনটাই থাকত৷

পৌরাণিক গ্রন্থতে বর্ণিত ‘পুত্রেষ্ঠী যজ্ঞ’ পুত্র প্রাপ্তির জন্য করা হত ও পুত্র প্রাপ্ত হত৷ অবশ্যই এর পেছনে বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত থাকতে হবে৷ এখন এইভাবে সন্তান পুত্র বা কন্যা হবার সম্ভাবনা থাকে এবং বিজ্ঞানও এটিকে সমর্থন করে৷ অতএব আপনি ইচ্ছানুযায়ী সন্তানের জন্ম দিতে পারেন৷

সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে তার রক্ষা, সুখ, স্বাস্থ্য ও আয়ুর প্রশ্ণ সমসময় থাকে৷

এই কারণে এরও পুরো ব্যবস্থা আছে৷ এই সরল বিধি বা টোটকার পিছনে এই রহস্য অথবা ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে৷ এসবের নিজের নিজের সিদ্ধান্ত ছিল৷ জগৎ জননী সীতার জন্ম একটি ঘড়ায় হয়েছিল৷ এই ঘটনাটি কতটা সঠিক তা কেউ জানে না৷ আজ বিজ্ঞানের দ্বারা টেস্ট টিউব এ সন্তান জন্মগ্রহণ করছে৷ দরকার শুধু এতে পূর্ণ বিশ্বাস ও সাবধানতার সাথে আমল দেওয়া হোক৷ সন্তান ইচ্ছুক ব্যক্তিগণের বিজ্ঞানের এই ব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে কাজ করতে হবে৷

ডাক্তারি চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে যে কার্য সম্পন্ন হয়, সেই কার্য টোটকাও করে থাকে৷  বোঝার পার্থক্য শুধু নিজের চিন্তাধারার উপর৷ যে বৃক্ষবিশেষ আয়ুর্বেদে জ্বর নিবারণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যেটাকে আমরা কুইনিন নামে জানি, আর আজ সেটা আরও পরিষ্কার ভাবে সামনে এসে গেছে৷ তন্ত্রতে প্রয়োগ এক প্রকারের বনস্পতি ও জরি-বুটির সাহায্য করা হয়৷ এবার এটা ডাক্তারি চিকিৎসা ও ডাক্তারি ঔষধের সমান নিজের প্রভাব দেখাতে শুরু করে৷ এই বিষয়ে আমার অন্য বই পড়ুন৷

সমস্ত দম্পতিদের ইচ্ছা থাকে যে তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী সন্তানের জন্ম হোক৷ এই বিষয়ে বিজ্ঞান সমর্থন করেন যে গর্ভস্থ শিশুর উপর মায়ের চিন্তাধারার যথেষ্ট প্রভাব পরে৷ অতএব মনোবিজ্ঞানী ও ডাক্তারদের উক্তি অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় স্ত্রীদের প্রসন্ন থাকতে হয়৷ একটি সুন্দর শিশুর কল্পনা করতে হবে৷ নিজের শয়নকক্ষে সুন্দর শিশুর ছবি লাগান৷ নিয়ম করে সেই ছবিগুলি দেখতে থাকুন৷ এইভাবেই সুন্দর, সুস্থ, ও হাসি-খুশি সন্তানের জন্ম হবে৷

পৌরাণিক কথা অনুযায়ী অর্জুন অভিমুন্যুকে গর্ভাবস্থাতেই চক্রবূহ্যের খণ্ডন করা শিখিয়েছিলো৷ এটি বিচারের সাহায্য অবশ্যই সম্ভব৷ অতএব যা বিচার ভাবনা মনে থাকবে, তা তার সন্তানের উপর অবশ্যই প্রভাব পড়বে৷ অর্থাৎ আপনি নিজের বিচারের উপর নিয়ন্ত্রণ করে মনোবাঞ্চিত সন্তান পেতে পারেন৷ এই পৃথিবীতেই টোটকা তার নিজের কার্য করে যায়৷ এটিকে সন্দেহ করা উচিত নয়৷ আপনি এটির প্রয়োগ করে মনোবাঞ্চিত সন্তান পেতে পারেন৷

এই কথাটি মনে রাখতে হবে যে, টোটকাটি গুপ্ত ভাবে করতে হবে, নয়ত আশানুরূপ ফল পেতে সমস্যা দেখা দেবে৷


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *