পরোপজীবী তন্ত্রসার / Parasitic Tantra System

প্রায়ই এমন দেখা গেছে যে, অশ্বত্থ বা অন্য কোনও প্রকারের গাছ, অন্য কোনও গাছের উপর নিজ থেকে গজিয়ে উঠে৷ এটিকেই পরজীবী বলে৷ কিন্তু বাস্তবিকভাবে পরজীবী একটু আলাদা প্রকৃতির হয়ে থাকে৷ এটি আম, জামরুল অথবা মহুয়ার গাছে দেখা হয়৷ এতে গোল ও মোটা শক্ত-শক্ত পাতা বের হয়৷ এটিকে তন্ত্রতে বিভিন্ন প্রকারে প্রয়োগ করা হয়৷

পরজীবী গাছকে নিয়ম করে নিমন্ত্রণ দিয়ে রবিপুষ্যা যোগে বাড়িতে নিয়ে আসুন ও মন্ত্র সিদ্ধ করে রেখে দিন৷ এরকম পরজীবী অনেক চমৎকার প্রভাবকারী হয়৷ নক্ষত্র অনুযায়ী এর বিভিন্ন প্রয়োগ করা হয়৷

পরজীবী তন্ত্রে নক্ষত্র, বার ও সময়ের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ যে প্রয়োগে যে পরজীবীর বর্ণনা করা হয়, তারই প্রয়োগ করা উচিত৷

নক্ষত্র অনুযায়ী পরজীবীর প্রয়োগ নিম্নভাবে করা উচিত৷

অশ্বিনী : অশ্বিনী নক্ষত্রে তান্ত্রিক বিধান দ্বারা পরজীবী নিয়ে ডান হাতে ধারণ করা উচিত৷ যদি এরকম পরজীবী বেল গাছের হয় তাহলে তান্ত্রিক নিয়মে পূজা করে মন্ত্রটি সিদ্ধ করে ধারণ করলে লুপ্ত বিদ্যা সিদ্ধি লাভ করবে অর্থাৎ সেই ব্যক্তিকে কেউ দেখতে পারবে না, কিন্তু নিজে সবাইকে দেখতে পারবে অর্থাৎ অদৃশ্য হয়ে যাবে৷

ভরণী : ভরণী নক্ষত্রে উপরোক্ত নিয়মে যদি তুলোর পরজীবী নিয়ে ব্যবহার করা হয় তাহলে সেই ব্যক্তিকে কেউ দেখতে  পারবে না৷

এই ভাবে কিছু তান্ত্রিকের মত অনুযায়ী যদি কুশের শিকড় ও পরজীবী এই দুটিকে বাড়িতে এনে স্থাপন করা হয় তাহলে বাড়িতে সমৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে৷

কৃত্তিকা : মল গাছের পরজীবী নিয়ে কৃত্তিকা নক্ষত্রে ধারণ করলে বাকসিদ্ধ হয়৷ এর প্রভাবে কথায় প্রভাবশীলতা আসে৷

পুষ্যা  : পুষ্যা নক্ষত্রে নিয়ম করে তেঁতুলের চারাগাছ বাড়িতে রাখলে অর্থ-সম্পদের বৃদ্ধি হতে থাকে৷ এটি মনে রাখার বিষয় যে, বিবাহের কার্য ছাড়া অন্যান্য সমস্ত কার্যে যেমন আধ্যাত্মিক প্রয়োগ, তন্ত্র-মন্ত্রণা সাধনায় পুষ্যা নক্ষত্রকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে৷ কোনও দিন যদি পুষ্যা নক্ষত্র হয় তাহলে নক্ষত্র, বার, লগ্ণ, তিথি ইত্যাদি সব গৌণ হিসাবে ধরা হয়৷ পুজো-পাঠ মন্ত্রাদি জপের জন্য গুরু পুষ্যা যোগে (বৃহস্পতিবার পুষ্যা নক্ষত্রের যোগ শ্রেষ্ঠ বলা হয়৷ এই ভাবে তান্ত্রিক সাধনার ঔষধি সংগ্রহ অথবা বনস্পতি প্রয়োগে রবি পুষ্যা অর্থাৎ রবিবার দিন পুষ্যা নক্ষত্র যোগ) সবচেয়ে উত্তম বলে ধরা হয়৷ শেষে তন্ত্র ক্ষেত্রে যেখানে যেদিন বার, নক্ষত্র ইত্যাদির যোগসূত্র রয়েছে, সেখানে তারই প্রয়োগ করা উচিত৷

রোহিণী নক্ষত্রতে ডুমুর গাছের পরজীবী নিয়ম করে মন্ত্রিত করে যদি বাড়িতে স্থাপন করা হয়,তাহলে অর্থ-সম্পত্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ সাংসারিক ধন-সম্পদ ও মা লক্ষ্মীকে ঘরে আনতে এই চারাগাছটি বিশেষ ভাবে কার্যকরী হয়৷

অশ্লেষা: পরজীবী তন্ত্র সোমবার দিন অশ্লেষা নক্ষত্রে করা হলে বিশেষ ভাবে কার্যকরী হয়৷

প্রথম প্রয়োগ: হরিতকির গাছের শিকড় খুঁজে নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় সেটিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসুন এবং পরের দিন সোমবার অশ্লেষা নক্ষত্রে সকালে বিধিসম্মত ভাবে বাড়িতে আনুন৷ বিধিসম্মত পুজোর পরে এই শিকড়টিকে সিন্দুক ও গহনার বাক্সে রেখে দিলে বাড়িতে অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি ও মা লক্ষ্মীর নিবাস হয়ে থাকে৷ মা লক্ষ্মীর কৃপা পেতে এই শিকড়টিকে সর্বশ্রেষ্ঠ শিকড় বলা হয়েছে৷ এরসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত প্রয়োগ সূচি-শুদ্ধ ও গোপনীয়তার সাথে করা উচিত৷ প্রচার ও অনাস্থার সাথে করা প্রয়োগ বিফলে যেতে পারে৷

দ্বিতীয় প্রয়োগ: অশ্লেষা নক্ষত্রে অর্জুন গাছের ছাল ছাগলের শুদ্ধ মূত্র দ্বারা প্রলেপ করুন৷ এরপর এই প্রলেপটি মনোবাঞ্চিত ব্যক্তির মাথায় ছিটিয়ে দিলে সেই ব্যক্তি অন্যের প্রতি আকর্ষিত হয়ে যায়৷

যদি কখনও অশ্লেষা নক্ষত্রে অষ্টম শনি অথবা মঙ্গলের অবস্থান হয় তাহলে এরকম যোগসূত্রে অর্জুন গাছের ছাল নিয়ে বাড়িতে রাখুন৷ এরসঙ্গে পদ্ম ফুলের শিকড়, শতমুলা ও ডালিম এই তিনটির রস বার করে একসাথে মিশিয়ে ঘোল তৈরি করুন৷ এই রসাত্মক ঘোলটি ব্যবহার করলে ভূমিতে অবস্থিত ধন-সম্পদ নিজে থেকেই দেখা যায়৷

উত্তরাফাল্গুণী: যাদের দাম্পত্য জীবন কষ্টদায়ক হয়ে থাকে, তাদের এই নক্ষত্রে আমের শিকড় নিয়ে ডান হাতে সুতো দিয়ে বাঁধলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম-প্রীতি সম্পর্ক হয়ে দাম্পত্য জীবন সুখময় হয়ে উঠবে৷ এই শিকড় ধারণ করা ব্যক্তি সামাজিক মান-সম্মান ও প্রতিপত্তি পেয়ে থাকে৷

হস্ত: নিশিন্দার চারাগাছে উৎপন্ন হওয়া শিকড় হস্ত নক্ষত্রে বিধিসম্মত ভাবে লক্ষ্মী পুজো করে যদি স্থাপন করা হয়, তাহলে বাড়িতে লক্ষ্মীর স্থায়ী নিবাস হয়৷

চিত্রা: গাভরি গাছের শিকড় নিয়ে স্থাপিত করলে বা বাঁধলে প্রেমের সম্পর্ক ভালো হয়৷ এই শিকড়টি পানের সাথে যাকে খাওয়ানো হবে, সেই ব্যক্তি (যে তাকে খাইয়েছে) তাকে মান-সম্মান ও প্রেম প্রদান করবে৷

পঞ্চদশ : পঞ্চদশ নক্ষত্রে কোনও গাছের শিকড় সঙ্গে বা পকেটে রেখে দিলে মান-সম্মান পাওয়া যায়৷ এটি এতটাই প্রভাবশালী হয় যে রাজদরবারেও মান-সম্মান পাওয়া যায়৷

পঞ্চদশ নক্ষত্রে কুল গাছের শিকড় ধারণ করলে অভিষ্ঠ পূর্তিতে সহায়ক হয়ে থাকে ও এর প্রভাবে মনোবাঞ্চিত বস্তুর প্রাপ্তি হয়৷

পঞ্চদশ নক্ষত্রে সিদ্ধ করা নিমের শিকড় অদৃশ্যকরণ শক্তির সঞ্চার করে৷ এই শিকড়টি হাতে ধারণ করলে ব্যক্তি অদৃশ্য হয়ে যায়৷

বিশাখা: এই নক্ষত্রে মহুয়ার শিকড় সিদ্ধ করে মাথায় ধারণ করলে শারীরিক শক্তির বৃদ্ধি হয়৷

অনুরাধা: অনুরাধা নক্ষত্রে করবীর শিকড় সিদ্ধ করে ডান হাতে ধারণ করলে বিরোধী ও শত্রু দমন হয়ে যায়৷

জ্যেষ্ঠা  : এই নক্ষত্রে ডালিম গাছের শিকড় সিদ্ধ করে প্রধান দরজায় টাঙিয়ে দিলে পরিবারের শিশুদের উপর থাকা গ্রহের প্রকোপ শেষ হয়ে যায়৷ দুষ্ট গ্রহ থেকে রক্ষার জন্য এটি স্থায়ী প্রয়োগ৷

মূলা : মূলা নক্ষত্রে খেজুর গাছের শিকড় নিয়ে ডান হাতে ধারণ করলে সেই ব্যক্তি শত্রুকে দমন করতে পারে৷

পূর্বাষাঢ়া : পূর্বা গাছের শিকড় নিয়ে ডান হাতে ধারণ করলে সেই ব্যক্তির ব্যবসায় অপ্রত্যাশিত ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে৷

উত্তরাষাড়া: এই নক্ষত্রে অশোক গাছের শিকড় নিয়ে বিধিসম্মত ভাবে মন্ত্র দ্বারা অভিষিক্ত করে ধারণ করলে সেই ব্যক্তি অদৃশ্য হয়ে যায়৷

শতভিষা: সুপারি গাছের শিকড় নিয়ে মন্ত্র সিদ্ধ করে গরুর দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে বার্ধক্যের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ বৃদ্ধাবস্থা রোধ করার এটি সর্বোত্তম শ্রেষ্ঠ আয়ুর্বেদ পদ্ধতি৷ এতে এক সের দুধ ও ৭-৮ রত্তি সিদ্ধ করা শিকড় রাখতে হবে৷ এটি নিয়মিত ছয় মাস পর্যন্ত পান করলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকা যায়৷ সাধু, সন্তরা এর সেবন সাধনার জন্য করে থাকেন৷

নক্ষত্র যোগ ছাড়া বিশেষ মুহূর্তে শিকড় নিয়ে সিদ্ধ করলে চমৎকার কাজ হয়৷ এর কিছু প্রয়োগ নিম্নে দেওয়া হল:-

সূর্য অথবা চন্দ্র গ্রহণের একদিন আগে ডুমুরগুল্ম শিকড়কে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসুন৷ এটিকে বিধিসম্মত ক্রিয়ার দ্বারা দেবমূর্তির মতো পুজো-অর্চনা করার পর মন্ত্র দ্বারা সিদ্ধ করুন৷ এরসাথে শিকড় নিয়ে যাবার সময় ঘি, চিনি ও সুজির দ্বারা তৈরি হালুয়া কোনও পরিষ্কার মাটির পাত্রে নিয়ে নৈবিদ্যর সাথে গাছকে অর্পণ করুন৷ গ্রহণ শুরু হবার সাথে-সাথে দেবতার মতো পুজো করুন ও পুজোর পরে মোহকাল পর্যন্ত পদ্ম ফুলের মালা দ্বারা নিম্নলিখিত মন্ত্রটি জপ করতে থাকুন৷ গ্রহণ শেষ হবার পর এই মন্ত্রটিকে ২১ বার হবন আহুতি দিন৷ তারপর দেব-প্রতিমার কাছে ও অন্য কোনও পবিত্র স্থানে লাল কাপড়ে মুড়ে রেখে দিন৷ এটি রাখার পরে সেখানে মা লক্ষ্মীর স্থায়ী নিবাস হয়ে থাকে৷

এই শিকড়টিকে চৌকো ভূজ্যপত্রের উপর খুব অল্প পরিমাণে স্বর্ণ-খণ্ড রেখে মুড়ে ফেলুন ও লাল সুতা দিয়ে মোড়কে রেখে বাঁধুন ও তাবিজ তৈরি করে গলা অথবা ডান হাতে ধারণ করুন৷ এই ক্রিয়ার সাহায্যে অর্থ-সমাগমের পথ সুগম হয়ে যায়৷

‘ওঁ মহালক্ষ্যে চ বিদ্মহে বিষ্ণু ও পতনে ধীমহি তন্নো লক্ষ্মী প্রচোদয়াৎ৷’

হোলির ঠিক আগের দিন সূর্য অস্তের আগে পলাশ গাছের শিকড় নিয়ে ইষ্টদেবীর মতো পুজো করুন ও মন্ত্র দ্বারা সিদ্ধ করার পর এটিকে সিন্দুক, গলা অথবা পকেটে রেখে দিলে লক্ষ্মীর আগমনের পথ সুগম হয়ে যায়৷

You may also like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *