দাদু-দিদা, ঠাকুমা-ঠাকুরদার টোটকা / Totka for Grandparents

মানুষের সারা জীবন ইচ্ছা ও মনোস্কামনার উপর আধারিত৷ আর প্রতিটি মানুষ এটাই চান যে তার জীবনের সমস্ত ইচ্ছা যেন পূর্ণ হয়ে যায়৷ কিন্তু জীবনে আসা নানা বাধার কারণে সে প্রতিটি মুহূর্ত তাতেই জর্জরিত হয়ে যায়৷ এই বাধা দূর করবার জন্য কোনও বিশেষ তন্ত্রের প্রয়োজন হয় না৷ ব্যাস, কিছু সরল টোটকার সাহায্যে নিয়ে প্রতিটি মানুষ জীবনে সফলতা প্রাপ্তি করে জীবনের আসল সুখ উপভোগ করে৷

ঈশ্বরীয় অস্তিত্বের দৈবিক শক্তির সাথে কিছু আসুরিক শক্তির অস্তিত্বও সংসারে প্রাচীনকাল থেকে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত৷ প্রেতলোকও এতে অস্পৃষ্ট হয় না৷ প্রেতাত্মা দুই ধরনের হয়—শুভ ও অশুভ৷
পূর্বপুরুষ, দেবতা, দিগপাল ইত্যাদি বিশ্ব-জগতের শুভ আত্মা৷ বেতাল, জীন,ব্রহ্মরাক্ষস ইত্যাদি অশান্ত জগতের অশুভ প্রেতাত্মা৷ এছাড়া অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে সেই আত্মা প্রায়শই প্রেত যোনিতে চলে যায়, যে নিজের অতৃপ্ত ইচ্ছাপূরণের জন্য পরিবারবর্গ ও পরিজনকে কষ্ট দিয়ে থাকে৷ আত্মার অস্তিত্ব বিশ্বের সব ধর্মতেই স্বীকার করা হয়েছে৷ এর দ্বারা উৎপন্ন বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি দূর করবার অনেক টোনা-টোটকা প্রচলিত আছে৷
আজকের এই বৈজ্ঞানিক যুগে কিছু ব্যক্তি টোনা-টোটকা, গন্ডা, ডোরা, তাবিজ ইত্যাদি মানেন না, তবুও এর প্রতি বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিদের একটি বড় সংখ্যা আছে৷ আজও অনেক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে যায় ও যা বিজ্ঞানকে রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়৷
ভারতবর্ষের লোকেরা তান্ত্রিক ও জ্যোতিষী শাস্ত্রে বিশ্বাস করেন৷ বিদেশে জাভা-সুমাত্রায় মাসের শুরুতে শিশুদের দৃষ্টি অশুভ আত্মার বলে মনে করা হয়৷ এর প্রতিকারের জন্য শিশুদের বিছানার নীচে নারকেলের খোসায় ডিম মিশানো কালো চাল (বড় বড় মলে কিন্নই নামে খ্যাত) ও তাতে লাল লঙ্কা ভরে রেখে দিন যাতে কোনও ধরনের অতৃপ্ত আত্মা তার দিকে নজর দিতে না পারে৷
দুষ্ট আত্মাকে ধোকা দেবার জন্য পাথরের চোখ, নাক, পা তৈরি করে সেটি শিশুর বিছানায় শুইয়ে রেখে দিন যাতে সে ভুল করে তার উপরেই আক্রমণ করে৷ চীন দেশে যদি কোনও কুমারী কন্যা মারা যান তাহলে তার বিবাহ এমন ছেলের সাথে করে দেওয়া হয় যে আগে মারা গেছিলো৷ এটি এইজন্য করা হয় যাতে মরার পর মেয়েটি অবিবাহিতা না থাকে৷ ভিয়েতনামে ভূত-প্রেত তাড়াবার জন্য রং-বেরঙের আতশবাজি পোড়ানো হয়৷
আত্মা যখন আয়নায় নিজের আকৃতি দেখবে সে ভয়ে পালিয়ে যাবে৷ আমাদের এখানেও কোনও ব্যক্তি যখন খারাপ স্বপ্ণ দেখেন অথবা কোনও দুষ্ট আত্মাকে দেখেন তাহলে তার বালিশের তলায় লোহার খাপ ছাড়া চাকু রেখে দেওয়া হয়৷ জাপানে উত্তর দিকটি অশুভ মানা হয় যেখানে ভারতে পশ্চিম দিকটি,সেইজন্য জাপানে বাড়ির প্রবেশপথ উত্তর দিকে তৈরি করা হয় না৷ ফিজিবাসীদের মতে তারা বলেন যে, ভূত-প্রেত জঙ্গলে থাকেন৷ কম্বডিয়াতে সকালে শবদাহ দেখা শুভ বলে ধরা হয়, যখন এটি বিকালে দেখা অশুভ বলে ধরা হয়৷
টোটকা একটি বহু-প্রচলিত ও তান্ত্রিক প্রয়োগ, যা করলে সিদ্ধি লাভ হয়৷ এই কারণে জনতার মধ্যে প্রিয় ও হিতকারী কার্যে বাধা ও আপত্তি থাকলে টোটকা প্রয়োগ করা হয়৷ লোকাচারে জ্ঞানীগণ এটিকে কার্য সিদ্ধির অবলম্বন বলে মেনে থাকে৷
ভারতীয় টোটকা বিজ্ঞান নিজে যতটা শক্তিশালী, ঠিক ততটাই অনেক প্রভাবশালী৷ টোটকা আসলে কী? যেভাবে রেডিওর ধবনি শব্দ শক্তির পরিচায়ক, যেভাবে এর পরিচালনা স্টেশন, সুইচ একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর করা হয় ঠিক সেভাবে টোটকার বিষয়ের উপরেও হয়৷ আস্থা, বিশ্বাস, চেষ্টা ও তার সিদ্ধির বিভিন্ন পদ্ধতির পালন টোটকা সিদ্ধির একটি আধার হিসাবে ধরা হয়, যার দ্বারা মনোস্কামনা পূর্ণ হয়৷


বেদে যে সাধনা ও বিধি -বিধানের উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রক্রিয়া অনেকটাই বড়৷ তান্ত্রিক বিদ্যাও তার মধ্যে অন্যতম৷ সংসারী মানুষ নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তন্ত্র বিদ্যাকে সহজ ও সরল পথ হিসাবে ধরে নেয়৷ আজ প্রায় সব প্রদেশে তন্ত্র সাধনার একটি আলাদা গুরুত্ব আছে৷
ভারতবর্ষে তন্ত্র সাধনার অধিকমাত্রায় প্রচলন হয়েছে৷ তন্ত্রের অর্থ অনুষ্ঠান ও রক্ষা ইত্যাদি থেকে নেওয়া হয়৷ তন্ত্রের সাহায্য সাংসারিক ও পারলৌকিক জীবনে সুখ নিদর্শন দেয়৷ তন্ত্র সেই প্রক্রিয়াকেও বলা হয়, যেটা মন্ত্রানুষ্ঠান সিদ্ধান্তের উপর আধারিত৷ তন্ত্রের সাহায্য মানুষ অনেক প্রকার ভয় থেকে মুক্তি পায়, যা মানুষকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় সেটাই আসল তন্ত্র৷
তন্ত্র নামক গ্রন্থটির রচনা ভগবান শিব ও পার্বতীর পারস্পরিক কথোপকথনের সাহায্য হয়েছে, যখন পার্বতী মানব কল্যাণের জন্য শিবের কাছে কিছু প্রশ্ণ করলেন তখন ভগবান শিব তার উত্তর দিলেন, সেই উত্তরগুলিই মন্ত্রের আকারে প্রকট হয়েছে৷ শিব-পার্বতীর পারস্পরিক কথোপকথনের দ্বারা যে বিদ্যা প্রকট হয়েছে, সেই বিদ্যাই তন্ত্র সাধনায় স্থান পেয়েছে৷ তন্ত্র বিদ্যা তিন প্রকারের হয়—সাত্ত্বিক,রাজস্ব, ও তামস৷ দান্রাত্র ও গৌতমীয় তন্ত্র স্বাত্তিক তন্ত্র৷ শোওগামী ইত্যাদি তন্ত্র রাজসি ও ভৈরব তন্ত্র তামস তন্ত্র৷ তন্ত্র শাস্ত্রতে জ্ঞানী সাধক বিশেষ প্রকারের তরঙ্গ উৎপন্ন করে, যা মানুষের ইচ্ছেকে সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করে৷ মন্ত্রের উচ্চারণ বিশেষ উদেশ্য পূরণের জন্য করা হয়, যে শক্তি কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে অভিষ্ট বস্তুকে প্রাপ্ত করতে সাহায্য করে৷
যন্ত্র আকৃতি প্রধান হয়৷ যেভাবে মানুষ সামান্য আকৃতি দেখে কোনও ভাবে প্রভাবিত হয়, ঠিক সেভাবে তান্ত্রিক যন্ত্রতে দেব-দেবী, প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে৷ তন্ত্র সাধনার জন্য পাহাড়, নদীর সঙ্গমস্থল, গুহা,ঘাটি ও জঙ্গল ইত্যাদি সিদ্ধিদায়ক স্থান ধরা হয়, কারণ এই সব স্থানে তন্ত্র সাধনার জন্য সমস্ত উপকরণ সহজেই পাওয়া যায়৷ ইহা প্রাচীনকাল থেকেই দেবতাদের সাধনাস্থল হয়ে আসছে৷ যখন কোনও নিশ্চিত তিথি, দিন, বার,নক্ষত্র ইত্যাদি রাশি অনুসারে বিধি-বিধান মেনে সাধনা করা হয় তখন চমৎকার ভাবে ভালো ফল পাওয়া যায়৷
তন্ত্র বিধির সাহায্য ধ্যানমগ্ণ হয়ে মানুষ সম্পূর্ণ শরীরকে স্থির করে অতল গভীরে পৌঁছে পরম সুখ প্রাপ্ত করে, কিন্তু জনপ্রিয়তা টোনা টোটকার হয়৷
টোটকার অর্থ হলো কম জিনিস, কম সময়ে, অল্প পরিশ্রমের দ্বারা সফলতা প্রাপ্ত করা৷

You may also like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *